১৮ই জানুয়ারি। চলেছি বস্টনের শহরতলি ফ্রেমিংহামের একটি চার্চে। বাইরে হিমেল এক ধূসর শীতের সন্ধে, গায়ে কেটে বসা হাওয়ার মধ্যে শাড়ি, ভারী জ্যাকেট সামলে চার্চের মধ্যে ঢুকতেই এসে পড়লাম কোথায়? দিশারীর পৌষমেলায়। এই প্রথমবার নিউ ইংল্যান্ডে। আচ্ছা এর হাতে, ওর হাতে, কারো হাতে তালি দিইনি তো? কিন্তু ম্যাজিক হয়ে গেল। ঢুকেই ঝালর বসানো হাতপাখায় অপূর্ব সুন্দর বাংলার পটচিত্র দিয়ে তৈরি হয়েছে চালচিত্র, আল্পনা, কুলো, যামিনী রায়ের ঘরানায় হাতে আঁকা ছবি, কুঁড়েঘর- ঝলমল করছে চারদিক। কোথায় চলে গেলো ঠান্ডা? অপূর্ব সুন্দর সব বাংলার ঐতিহ্যবাহী শাড়ি, পাঞ্জাবি পরা হাসিমুখের উষ্ণতা চারদিকে।
মেলায় স্টল বসবে না? কাঠ, কাপড় পুঁথির গয়না, দেশের শিল্পীদের আঁকা ছবি, এখানকার শিল্পীদের, বাংলার ঐতিহ্যবাহী শাড়ি, আর তার মধ্যে ছিল বইও। আর তাছাড়া ছিল খাবার – বাংলাদেশের রকমারি পিঠে, নতুন গুড়ের দেশ থেকে আনানো মিষ্টি, কলকাতার ফুটপাথের রোল, ফিশফ্রাই আরও কত কী যে। তার মধ্যেই ওই খোলা জায়গায় পৌষের গানের সাথে মন ভাল করা নাচ দিয়ে শুরু হল দুদিনব্যাপী পৌষমেলা। সংগঠক দিশারী। ছিল স্টেজে লোকগান, নাচ, কবি লেখকদের আসর আরও কত কী। এক সন্ধ্যায় যতখানি ফিরে পাওয়া যায় ফেলে আসা মিঠে ঠান্ডা আর নরম রোদ্দুর জড়ানো পৌষ মাসকে। উনিশ তারিখের পাওনা ছিল কলকাতা থেকে আসা জনপ্রিয় সিনেমা ‘বহুরূপী’। তুষারপাতের সাবধান বাণী অগ্রাহ্য করে হৈ হৈ করে পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা উপভোগ করে শেষ হল সপ্তাহব্যাপী পৌষ মেলা।